খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (র:)

খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ (১৮৭৩-১৯৬৫)

bahadurবিশিষ্ট শিক্ষাবিদ, শিক্ষা সংস্কারক ও সমাজহিতৈষী। ১৮৭৩ সালের ডিসেম্বরে তিনি বৃহত্তর খুলনা জেলার সাতক্ষীরা মহকুমার নলতা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। সেখানকার মধ্য ইংরেজি ও টাকির উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রাথমিক শিক্ষাজীবন শেষে তিনি কলকাতায় যান। তিনি ভবানীপুর লন্ডন মিশনারি স্কুল থেকে এন্ট্রান্স, ১৮৯২ সালে হুগলি কলেজ থেকে এফএ (F.A.=First Arts), ১৮৯৪-৯৫ সালে প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে যথাক্রমে বিএ এবং দর্শনশাস্ত্রে এমএ পাস করেন।
তিনি ১৮৯৬ থেকে ১৯২৯ সাল পর্যন্ত প্রসারিত তার কর্মজীবনে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলে সুপারনিউমারারি টিচার, ফরিদপুর ও বাখেরগঞ্জের ডেপুটি ইন্সপেক্টর, চট্টগ্রামের ডিভিশনাল ইন্সপেক্টর এবং সর্বশেষে বঙ্গদেশের শিক্ষা বিভাগের সহকারী ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করেন। এই দেশীয় পদস্থ কর্মকর্তাদের মধ্যে তিনিই সর্বপ্রথম আইইএস অর্থাৎ ইন্ডিয়ান এডুকেশন সার্ভিসের অন্তর্ভুক্ত হন।
খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ ভারতের মুসলমানদের মধ্যে শিক্ষা বিস্তারে নিরবচ্ছিন্ন ও একাগ্র ভূমিকা পালন করেন। তার চেষ্টাতেই সাম্প্রদায়িক পক্ষপাতিত্ব রহিত করার লক্ষ্য থেকে অনার্স ও এমএ পরীক্ষার খাতায় পরীক্ষার্থীর নাম লেখার পরিবর্তে রোল নাম্বার লেখার নিয়ম প্রবর্তন করা হয়। উচ্চ মাদ্রাসা ও মাধ্যমিক মাদ্রাসায় শিক্ষার মানের উন্নতি সাধনপূর্বক মাদ্রাসা থেকে পাস করা ছাত্রদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার সুযোগসহ স্কুল-কলেজে মৌলভির পদ সৃষ্টি করা হয় এবং প-িত ও মৌলভিদের মধ্যকার বেতনবৈষম্য দূর করা হয়। শুধু তা-ই নয়, মক্তবগুলোর জন্য স্বতন্ত্র পাঠ্যসূচি এবং শিক্ষায়তনে মুসলমান লেখকদের রচিত পুস্তক ব্যবহার ও প্রচলনের ব্যবস্থা তারই একান্ত উদ্যোগে গৃহীত হয়।
তার সময়কালে শিক্ষিত বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে যখন ইংরেজি, ফার্সি ও উর্দু ভাষা শিক্ষা করার প্রবল প্রবণতা বিদ্যমান এবং এর প্রভাব যখন সাধারণ বাঙালি মুসলমানদের মধ্যেও কার্যকর, তখন খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ সর্বতোভাবে বাঙালি মুসলমান সমাজকে বাংলা ভাষায় জ্ঞান-বিজ্ঞানচর্চা করার জন্য বিশেষভাবে উদ্বুদ্ধ করেন। তার সাহিত্যিক ও জীবনগত দৃষ্টিভঙ্গি ছিল অসাম্প্রদায়িক। মুসলমান লেখক-কবিদের উৎসাহিত করা ও তাদের রচিত গ্রন্থ প্রকাশ করার জন্য কলকাতায় মখদুমী লাইব্রেরি ও এম্পায়ার বুক হাউস প্রতিষ্ঠা, শিক্ষা ও সমাজসেবামূলক নানা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কলকাতা মহানগরীতে বেকার হোস্টেল, টেলর হোস্টেল, কারমাইকেল হোস্টেল ও মোসলেম ইন্সটিটিউটসহ আহ্ছানিয়া মিশন প্রতিষ্ঠা তার কীর্তির অন্যতম উল্লেখযোগ্য অংশ। শিক্ষা বিভাগের সার্বিক উন্নয়নে নানা ধরনের প্রগতিশীল পদক্ষেপের জন্য তাকে ‘খান বাহাদুর’ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
তার উল্লেখযোগ্য সাহিত্যকর্মÑ বঙ্গভাষা ও মুসলমান সাহিত্য, History of the Muslim World, আল ইসলাম, শিক্ষাক্ষেত্রে বঙ্গীয় মুসলমান, ইসলাম রবি হযরত মোহাম্মদ (স.), তরিকত শিক্ষা, আমার জীবনধারা, ছুফি ও সৃষ্টিতত্ত্ব ইত্যাদি। তিনি নানা বিষয়ে মোট ৭৭টি গ্রন্থ রচনা করেছেন।
খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ ১৯৬৫ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি নলতায় মৃত্যুবরণ করেন। (সৌজন্যে: আসাদ: